একটি নীরব মৃত্যু

একটি নীরব মৃত্যু
শেরউড অ্যান্ডারসন

(অনুবাদে -বর্ণালী জানা সেন )

 

আমি যে ছোট্ট শহরটায় থাকতাম তার পাশের এক খামারে থাকতেন তিনি। বয়সের ভারে নুয়ে পড়া অতি সাধারণ এক মহিলা। এদের মুখ সবারই খুব চেনা। গাঁয়ে গঞ্জে কি মফস্বলের রাস্তা ঘাটে প্রায়শই এদের দেখা মেলে। কিন্তু কেউ এদের সম্বন্ধে বিশেষ কিছু জানে না। এমনই এক মহিলা বুড়ো হাড় জিরজিরে এক ঘোড়ায় সওয়ার হয়ে শহরে এলেন । বোঁচকা বুঁচকি কাঁধে চাপিয়ে ধুঁকতে ধুঁকতেও পায়ে হেঁটেও এসে থাকতে পারেন। সবই সম্ভব। সঙ্গে গোটাকয় মুরগি। এই মুরগির ডিম বিক্রি করেই তাঁকে পেট চালাতে হয়। একটা ঝুড়িতে ডিম নিয়ে প্রথমে তিনি যান মুদিখানায়। সেখানে ডিম বেচে একটু পর্ক আর বিনস যোগাড় করেন। এক কি দু পাউন্ড চিনি আর আর একটু ময়দাও পেয়ে যান। সেখান থেকে সোজা কসাইখানায়। কুকুরের জন্য একটু মাংসও নিয়ে নেন । এর মধ্যেই দশ কি পনেরো সেন্ট খরচ হয়ে গেছে। এবার একটু মেটে চান তিনি। আগে তো কসাইখানাগুলোতে মেটের কোনো কমতি ছিলনা। চাইলেই একেবারে মুফতে মিলে যেত। আমাদের বাড়িতে তো আগে সবসময় মেটে আসত। ওই পাশে মেলার মাঠে যে কসাইখানাটা আছে সেখান থেকে আমার দাদা তো একবার একটা আস্ত গরুর পুরো মেটেটাই নিয়ে চলে এসেছিল। মাগনার জিনিস কে আর ছাড়ে! খেতে খেতে আমাদের জিভে একেবারে চড়া পড়ে গিয়েছিল। এত মেটে খেয়েছি যে ওই জিনিসটা দেখলেই পরে আমার গা গুলিয়ে উঠত।
কসাইখানায় বলে কয়ে খামারের ওই বয়স্ক মহিলা একটু মেটে আর টেংরিও পেয়ে যান। শহরে কারো সঙ্গে কথা বলতেন না তিনি। নিজের জিনিসগুলো নিয়েই হন্ত দন্ত হয়ে বাড়ির দিকে হাঁটা লাগাতেন । এই বয়সে এত ভারি থলে বয়ে নিয়ে যেতে কষ্ট হয় তাঁর। কিন্তু কী আর করবেন তিনি। রাস্তায় এত গাড়ি যায়। কেউ তাঁকে একবারও বলেনা… ‘আসুন আপনাকে একটু এগিয়ে দিই’। অমন সাদামাটা বয়স্ক একটা মানুষের দিকে ফিরেও তাকায় না কেউ।
সেবার গ্রীষ্মে এমনই এক মহিলা আমাদের শহরে এসে ঘাঁটি গাড়লেন। আমি তখন খুব ছোট। আর বেতো জ্বরে খুব ভুগছিলাম। শহরে বিকি কিনি সেরে তিনি বাড়ির দিকে চললেন। তার পেছন পেছন দু তিনটে কুকুর। খ্যাংরাকাঠি চেহারা।
মহিলাকে নিয়ে আলাদা করে কিছু বলার নেই। এমন শত শত নামহীন, গোত্রহীন না-চেনা মুখের সারি আমাদের সামনে রোজ ঘুরে বেড়ায়। কিন্তু কেন জানিনা ওই মহিলা কথা আমার মনে একেবারে গেঁথে গেল। আজ এতদিন পর তাঁর কথা খুব মনে পড়ছে। আর সেই বীভৎস ঘটনার কথা তো আমি কিছুতেই মন থেকে মুছে ফেলতে পারি না। সে এক নিদারুণ কাহিনি। চাইলেও ভোলা যায় না। পরে জেনেছিলাম ভদ্রমহিলার নাম গ্রাইমস। আমাদের শহর থেকে চার মাইল দূরে এক খাঁড়ির কাছে ভাঙা চোরা রংচটা ছোট্ট বাড়িতে স্বামী আর আর ছেলের সঙ্গে থাকতেন তিনি।
তাঁর স্বামী আর ছেলে দুজনেরই গুণের কোনোও ঘাটতি নেই! ছেলে এই একুশ বছর বয়সেই একবার শ্রীঘরের হাওয়া খেয়ে এসেছে! মহিলার মরদ নাকি ঘোড়া চুরিতে একেবারে হাত পাকিয়ে ফেলেছেন। শহরে এ নিয়ে খুব ফিসফাস । তা তিনি নাকি এর ওর বাড়ি থেকে ঘোড়া চুরি করে অন্য গ্রামে নিয়ে গিয়ে বেচে দেন। যখনও কারও বাড়ি থেকে ঘোড়া চুরি যায় তখন তিনি স্রেফ বেপাত্তা হয়ে যান কিছুদিনের জন্য। কিন্তু হাতে নাতে কেউ তাঁকে ধরতে পারে না। একবার আমি কোনো একটা কাজে টম হোয়াইটহেডদের আস্তাবলে গিয়েছিলাম। দুলকি চালে লোকটা এল সেখানে। এসে বসল সামনের একটা বেঞ্চে। বেঞ্চে আগে থেকেই দু তিন জন বসে গল্প করছিল। কেউ অবশ্য তাঁর দিকে ফিরেও চাইল না। কোনো উচ্চবাচ্যও নয়। কারো কাছ থেকেই পাত্তা টাত্তা নে পেয়ে উঠে গেল লোকটা। যাওয়ার সময় এবার পিছন ঘুরে একটু বাঁকা হাসিও ছুঁড়ে দিয়ে গেল। তার চোখে অদ্ভূত একটা অবজ্ঞা…যেন সে বলতে চায় ‘ আমি যেচে তোমাদের সঙ্গে ভাবসাব করতে এসেছিলাম। তোমরা কেউ আমার সঙ্গে একটা কথাও কইলে না। শহরের সবাই আমায় এমনই অছেদ্দা করে। তারপর একদিন যখন তোমাদের কারো না কারো বাড়ি থেকে ঘোড়া উধাও হয়ে যাবে তখন আমায় দুষতে এসোনা কিন্তু’। তবে এ সবই আমার অনুমান। লোকটা কোনো কথাই বলেনি। ওর ওই আগুন-চোখের ভাষায় আমি একটা কথাই পড়তে পেরেছিলাম… ‘ এক ঘুষিতে তোমাদের গাল ফাটিয়ে দেব’। ওর ওই চাউনি দেখে হাড় হিম হয়ে গিয়েছিল। এখনো যেন আমি স্পষ্ট মনে করতে পারি।
লোকটা কিন্তু পয়সাওলাবাড়ির ছেলে। ওহ এখন আমার মনে পড়ছে লোকটার নাম জ্যাক গ্রাইমস। তার বাবা জন গ্রাইমসের করাতকল ছিল একখানা। গ্রামের দিকে তখন প্রচুর গাছপালাও ছিল। ব্যবসা ভালোই জমে উঠেছিল। তারপর কাঁচা পয়সা হাতে এলে যা হয়! মদ আর মেয়ে মানুষের নেশাতে উড়ে পুড়ে গেল সব। এইভাবেই একদিন সে মরল। সম্পত্তির বাকি যেটুকু ছিল তা ঊড়িয়ে দিল ছেলে। কাটার জন্য আর বিশেষ গাছপালাও রইল না গ্রামে। দেনার দায়ে জমিজমা সব গেল।
বউটাকে সে পেয়েছিল এক জার্মান চাষির বাড়িতে। জুন মাসের কোনো একদিন সেই চাষির বাড়ি গম কাটতে গিয়েছিল সে। সেই চাষির বাড়িতেই দেখা হল কচি মেয়েটার সঙ্গে। সারাক্ষণ কুঁকড়ে থাকে মেয়েটা। মরতে তার দারুণ ভয়। আমার ধারণা ওই চাষির কেনা বাঁদী ছিল মেয়েটা। আর চাষির স্বভাব চরিত্তিরও সুবিধের নয়। মওকা পেলেই মেয়েটার সঙ্গে লটঘটের চেষ্টা চালিয়ে যায়। চাষি বউ সব টের পায়। মন থেকে সন্দেহ তার যায় না। বর বাড়িতে না থাকলে সে যত ঝাল ঝাড়ে নিরীহ মেয়েটার ওপর। সেদিন কেনাকাটা করতে চাষিবউ গিয়েছিল শহরে। মেয়েটার সঙ্গে একটু ফস্টিনস্টি করার এই তো সুযোগ! জ্যাকের সঙ্গে যখন দেখা হয় তখন মেয়েটা বলেছিল ওই চাষির সঙ্গে তার কোনো লেনাদেনাই নেই। কিন্তু জ্যাক একথা মন থেকে বিশ্বাস করতে পারেনি।
মেয়েটাকে খুব সহজেই হাতের মুঠোয় পেয়ে গিয়েছিল জ্যাক। তবে ওই চাষি যদি তাকে পালানোর পথটা দেখিয়ে না দিত তবে তার জীবনেও মেয়েটাকে বিয়ে করা হত না। সেদিনও রাতে সে চাষির বাড়িতে রাতে গম ঝাড়াই করছিল। মেয়েটাকে নিয়ে ছোট একটা ছ্যাকরা গাড়িতে করে একটু ঘুরেফিরেও এল। আবার পরের রোববার রাতে সে হাজির।
চাষির নজর বাঁচিয়ে মেয়েটি ঘরের বাইরে বেরোয়। তারপর যেই সে গাড়িতে উঠতে যাবে তখনি মূর্তিমান বিভীষিকার মতো মালিক এসে হাজির। অন্ধকারে চারদিকে ভালো করে ঠাওর করা যায় না । কিছু বোঝার আগেই লোকটা ঘোড়ার পিঠে চেপে বসে লাগামটা হাতে টেনে নেয়। ওদিকে জ্যাক ঘোড়ার চাবুকটা টেনে বের করে। এবার শুরু হয় দুজনের লড়াই। চাষি সহজে ছাড়ার পাত্র নয়। তার গায়ে বেশ তাকত। বউ জানতে পারল কি না পারল তাতে তার কিচ্ছু যায় আসে না। ওদিকে জ্যাক লোকটার মুখে মারে চাবুকের এক বাড়ি। ভয় পেয়ে ঘোড়া ছুটতে শুরু করে। লোকদুটো তখন মারামারি  করতে করতে কোথায় যে গেল মেয়েটি আর দেখতে পায়নি। ওদিকে ঘোড়া ছুটছে তো ছুটছেই। কোনোদিকে খেয়াল নেই। গাড়িতে মেয়েটা একা। পাগলা ঘোড়াটাকে কিছুতেই থামাতে পারে না সে। ভয়ে বুক কাঁপে। প্রায় এক মাইল ছোটার পর কোনো রকমে থামানো যায় ঘোড়াটাকে। মেয়েটি রাস্তার ধারে একটা গাছে ঘোড়াটাকে বেঁধে একটু হাঁফ ছাড়ে ( এত কথা আমি আমি কী করে জানলাম? মাঝে মাঝে আমারই অবাক লাগে। ছোট শহরে সবাই সব কথা জানতে পারে। সেই ছোট থেকে এর ওর কাছ থেকে টুকরো টাকরা কথা শুনে গল্পটাকে জোড়া লাগিয়েছি আমি।)
জার্মান চাষিটাকে আচ্ছা সবক শিখিয়ে মেয়েটাকে খুঁজতে শুরু করে জ্যাক। হাঁটতে হাঁটতে রাস্তার মাঝে মেয়েটিকে পেয়েও যায়। গাড়ির ভেতর গুটিসুটি মেরে বসে আছে মেয়েটি। ভয়ে মুখ সাদা। মনের সব কথা মেয়েটি উজাড় করে দেয় জ্যাকের কাছে। মালিক তাকে দিনরাত জ্বালিয়ে মারত। তার ওপর জোর জুলুম করার চেষ্টাও করেছে অনেক। মালিকের লোভের হাত থেকে বাঁচতে আস্তাবলে গিয়ে লুকোতে হয়েছে তাকে। আরো অনেক কীর্তি করতেছে সেই লোক। বাড়িতে তারা দুজনেই ছিল সেদিন। চাষিবউ গিয়েছিল শহরে। কেনাকাটা করতে। সেই মোক্ষম সু্যোগে তার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে মালিক। জোর করতে গিতে তার জামাটাকে সামনে থেকে টান মেরে পুরো ছিঁড়ে দেয়। সেই সময় গেটের কাছে চাষিবউয়ের গাড়ির আওয়াজ না পেলে তার আর মান ইজ্জত থাকত না সেদিন। বউকে লুকিয়ে খিড়কির দরজা দিকে পালায় সেই শয়তান। যাওয়ার আগে মেয়েটিকে তার রীতিমতো শাসানি… ‘মুখ খুললে জানে মেরে দেব’। অগত্যা মিথ্যেই বলতে হয়। আস্তাবলে ঘোড়াগুলোকে খাওয়ানোর সময় ধ্বস্তাধ্বস্তিতে জামা ছিঁড়েছে। আর কী করতে পারত সে! কোথায়ই বা যেত। জন্ম থেকে থেকে সে যে কেনা গোলাম। বাপ মা নেই। খুব সম্ভবত তার বাপেরও কোনো ঠিক ঠিকানা নেই। আমার কথা আপনারা নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন।
এই দাসী বাঁদীদের ওপর কী যে অত্যাচার চলে সে আর বলার নয়। তারা জন্ম থেকে অনাথ। যেন দাসত্ব করার জন্যই তাদের জন্ম। তখনকার দিনে তো আর এত অনাথাশ্রম ছিল না। অন্যের বাড়িতে বাঁদীগিরি করেই জীবন কাটে এদের। মেয়েটি যে পালাতে পেরেছিল…সে নেহাতই বরাতজোরে।

জ্যাককেই বিয়ে করে মেয়েটি। দুটো ছেলেমেয়েও হয় তাদের। তবে মেয়েটি বেশিদিন বাঁচেনি। বাড়িতে গাদা খানেক পোষা পশু পাখি। তাদের খাওয়ানোর কাজটা মেয়েটিকেও নিতে হয়। জার্মান মালিকের বাড়িতে মালিক…মালকিনের জন্য তাকেই রাঁধা বাড়া করতে হত। চাষিবউয়ের বেশ শক্ত পোক্ত পেটানো চেহারা। তিনি স্বামীর সঙ্গে খেতে কাজ করতেই ব্যস্ত। তাঁদের খাইয়ে গোয়াল ঘরে গরু, শুয়োর, ঘোড়া… মুরগি সব্বার মুখে খাবার তুলে দিতে হত তাকে। প্রতিদিন সেই একই রুটিন। প্রতি মুহূর্তে। অন্যের পেট ভরাতেই কেটে গেছে তার সারা কৈশোর…যৌবন।
বিয়ের পর স্বামীর মুখে খাবার তুলে দেওয়ার দায়িত্বও চাপল। এমনিতে তার রোগা ক্ষয়াটে শরীর। বিয়ের তিন চার বছরের মধ্যে দুই সন্তানের জন্ম দিয়ে চেহারা তার একেবারে ভেঙে পড়ল। তার কাঁধ দুটো এখন নুয়ে আসে।
খাঁড়ির ধারে বাপের পরিত্যক্ত করাতকলের কাছেই জ্যাকের বাড়ি। জ্যাকের ইয়াবড় বড় কয়েকটা কুকুর বাড়ির পাশেই ঘুরে বেড়ায় সারাক্ষণ। চুরি চামারি না করলে জ্যাকের একটাই কাজ। ঘোড়া কেনাবেচা। বেশ কয়েকটা হাড় জিরজিরে ঘোড়া আছে তার কাছে। চারটে শুয়োর আর এক একটা গরুও পুষেছে সে। বাড়ির আশে পাশে যেটুকই ঘাস-জমি আছে সেখানেই চরে খায় পশুগুলো। কোনো কাজ করতে চায় না জ্যাক। একেবারে অকম্মার ঢেঁকি।
একটা গম ঝাড়াই যন্ত্রের জন্য বেশকিছু টাকা ধার করেছিল সে। যন্ত্রটা চলেওছিল বেশ কয়েক বছর। কিন্তু লোকের দেনা শোধ করেনি সে। কেউ তাকে আর বিশ্বাস করে না। সবাই ভয়ে ভয়ে থাকে পাছে সে রাতের অন্ধকারে গোলাঘর থেকে ফসল চুরি করে নিয়ে যায়! আশে পাশে সেকোনো কাজ পায়না। কাজের খোঁজে যেতে হয় অনেক দূরে। সেখানে আবার রাহা খরচে পোষায় না। শীতের সময় সে এটা ওটা শিকার করে বেড়ায়। আর জ্বালানির কাঠ কাটে। সেগুলো পাশের শহরে বিক্রি করে আসে।
ছেলে বড় হয়ে এক্কেবারে বাপেরই স্বাভাব পায়। বাপ ছেলে দুজনেই একসঙ্গে মদ গেলে। বাপ বেটা মাতাল হয়ে বাড়ি ফিরে বাড়িতে খাবার দাবার না পেলে চেঁচিয়ে বাড়ি মাথায় করে। বাপ তো আরো সরেস চিজ। মেরে বউয়ের মাথা ফাটিয়ে দেয়। লুকিয়ে চুরিয়েকয়েকটা মুরগি পুষেছিল বুড়ি। বাপ বেটার মুখে খাবার জোগাতে প্রতিবারই একটা না একটা মুরগি জবাই করতে হয়। সবকটা মুরগিকে মেরে ফেললে কী করে চলবে তার? এই মুরগির ডিম বেচেই তো তাকে শহর থেকে জিনিসপত্র আনতে হয়। এরাই যে তার শেষ ভরসা!
সবার মুখে খাবার তুলে দিতে দিতে সারা জীবন গেল তার। শুধু খাওয়ানো আর খাওয়ানো। জীবনে আর কিছু নেই তার। শুয়োরগুলোকে ভালো করে না খাওয়ালে তাদের গায়ে গত্তি লাগবে কী করে! ওগুলো একটু নাদুস নাদুস হলে তবেই না শীতের শুরুতে মাংস বেচে দুটো পয়সা ঘরে আসবে। শুয়োর কাটা হলেই তার মরদ বেশিরভাগ মাংস কেড়ে নেয়। তারপর বেচতে চলে যায় শহরে। কখনো কখনো বাপের আগে এসে মাংশে ভাগ বসায় ছেলে। মাংস নিয়ে শুরু হয় তাদের কাড়াকাড়ি…তারপর হাতাহাতি…ঘুসোঘুসি। বাপ ছেলের মারপিট দেখে থরথরিয়ে কাঁপে সে।
তবে এখন এসব তার সয়ে গেছে। গায়ে লাগে না আর। সে মুখও খোলেনা কোনোদিন। নীরবে শুধু নিজের কাজ করে যায়। জীবনটাকে বয়ে নিয়ে যেতে যেতে এই চল্লিশ বছরেই কেমন বুড়িয়ে গেল সে। বাপ আর ছেলে প্রায়ই বাড়ি থাকে না। তাদের আর কী! হয় চুরি চামারি, নয়তো ঘোড়া বিক্রি…আর তা না হলে মদের ঠেক। এই ফাঁকা বাড়ির চারপাশে ঘুরে ঘুরে নিজের মনেই বিড়বিড় করে সে। কী করে সে সবার খাবার জোগাবে…এই চিন্তাতেই পাগল পাগল লাগে। কুকুরগুলোকে খেতে দিতে হবে। গোলাঘরে অল্প কিছু খড় পড়ে আছে। তা দিয়ে গরু আর ঘোড়াগুলোর পেট কি আর কি ভরবে! মুরগীগুলোকে ভালো করে না খাওয়াকে ওরা ডিম দেবে কীভাবে? তবে একটাই যা বাঁচোয়া। স্বামীদেবতাটির শরীরের খিদে এখন আর তাকে মেটাতে হয় না। বাচ্চা কাচ্চা হয়ে যাওয়ার পরে ওসব তাদের চুকে বুকে গেছে। মাঝে মাঝে বেশ কিছুদিনের জন্য উধাও হয়ে যায় জ্যাক। কোথায় যায়…কী করে সে জানতেও পারে না। তারপর ছেলেটা বড় হতে সেও বাপের সঙ্গ ধরল।
বাড়িতে কী হচ্ছে না হচ্ছে তার কোনো খবর বাপ বেটা রাখেনা। তার একার কাঁধে স…ব। ওদিকে হাতে একটা পয়সা নেই। কী করে টানবে সে এই সংসারের জোয়াল। আশে পাশে কাউকে সে চেনে না। শহরে কেউ তার সঙ্গে কথা বলে না। শীতের সময় ঘর গরম রাখতে খড়কুটো কুড়িয়ে বেড়ায়। ঘরে যেটুকু খাবার আছে পশুপাখিগুলোকে দিয়ে দেয়। তাতে তাদের পেট ভরে না। গোয়াল ঘরে পশুপাখিগুলো খিদেয় কঁকিয়ে ওঠে। আর কুকুরগুলো খাবারের জন্য তার পিছু পিছু ঘোরে। শীতে এবার মুরগীগুলো এবার খুব অল্প ডিম দিল। শীতে মুরগীগুলো গোলাঘরের এক কোনে গুটিসুটি মেরে বসে থাকে। আর তাকে আঁতি পাঁতি করে ডিম খুঁজতে হয়। এই শীতে ডিমগুলো একেবারে বরফের মতো জমে গিয়ে ভেঙে যায়।
এমনই এক শীতের দিনে কয়েকটা ডিম হাতে নিয়ে সে যায় শহরের দিকে। কুকুরগুলোয় তার পিছু নেয়। ঘরে সব গুছিয়ে বেরোতে বেরোতে তিনটে বেজে গেল তার। বরফ পড়তে শুরু করেছে ততক্ষনে। কয়েকদিন ধরে শরীরটা ভালো যাচ্ছে না তার। রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতেও নিজের মনে বিড়বিড় করে যায়। তার গায়ে কোনো গরম জামাকাপড় নেই। কাঁধ দুটো নুয়ে পড়েছে। গমের একটা বস্তায় ডিমগুলো নিয়ে বেরিয়েছে সে। এই কটা ডিম অতবড় থলের নীচে কোথায় যে হারিয়ে গেল! তবে এই শীতে ডিমের ভালো দাম পাওয়া যায়। ডিমগুলো বেচে আজ খানিকটা পর্ক, অল্প চিনি সে কিনে নিতে পারবে। একটু আধটু কফিও হয়ে যাবে হয়তো। কসাইখানায় গেলে দোকানদার হয়তো তাকে একটু মেটেও দিয়ে দিতে পারে।
শহরে সে যখন দোকানে দোকানে বিকিকিনি করতে ব্যস্ত তখনও তাকে বাইরে থেকে পাহারা দিয়ে যায় তার কুকুরগুলো। আজকের সওদা তার ভালোই হল। যা ভেবেছিল তার চেয়ে অনেক বেশি জিনিসই পেয়েছে। এবার সে যায় কসাইখানায়। দোকানদার দয়া করে মেটে আর কুকুরের জন্য একটু মাংস দিয়ে দেয়। আজ এতদিন পরে এই দোকানদারই প্রথম তার সঙ্গে দুটো ভালো করে কথা বলল। সে যখন আসে তখন দোকানদার একা। এমন ঠান্ডার দিনে এই বয়স্ক মানুষটা কেন যে ঘর থেকে বেরোতে গেল ভেবেই একটু বিরক্ত হয় দোকানদার। তার ওপর মানুষটাকে কেমন যেন রুগ্ন আর ফ্যাকাশে লাগছে। মারাত্মক ঠান্ডা আজ। তারপর বরফ পড়ারও কোনো বিরাম নেই। দুপুরের দিকে একটু থেমেছিল বটে। এখন আবার লাগাতার শুরু হয়েছে। এমন একটা দিনে এই অসুস্থ মানুষটাকে কেউ বাইরে বেরোতে দেয়! মহিলার স্বামী আর ছেলেকে শাপ শাপান্ত করে দোকানদার। মহিলা একটু অবাক চোখে তাকিয়ে থাকে দোকানদারের দিকে। দোকানদার বলেই চলে মহিলাকে। ভাগ্যিস তিনি এসেছেন। তাঁর বদলে তাঁর ছেলে বা স্বামী যদি মেটে বা টেংরি কি মাংস নিতে আসত তাহলে সে দূর দূর করে তাড়িয়ে দিত তাদের। ওদের উপোস করে মরাই ভালো।
উপোস করে মরা? না না তা কী করে হয়! সবাইকে খেতে দিতে হবে যে। বাড়ির মানুষগুলোকে খেতে দিতে হবে। তারপর রয়েছে ঘোড়াগুলো। ওগুলো যদিও বিশেষ কোনো কম্মের নয়। তবুও দানাপানি তো দিতে তবে। খেতে না পেয়ে গরুটার হাড় পাঁজরা সব বেরিয়ে গেছে। তিন মাস দুধ দেয়নি।
সবার পেট ভরাতে হবে তাকে…ঘোড়া, গরু, শুয়োর, কুকুর, মানুষ…সব্বার।

অন্ধকার নামার আগে তাকে যে করেই হোক বাড়ি ফিরতে হবে। তাড়াতাড়ি পা চালায় বুড়ি। তার পিছু পিছু কুকুরের দল। বুড়ির পিঠে ঝোলানো ভারি থলেটার গন্ধ পেয়ে গেছে তারা। শহরের বাইরে বেরিয়ে একটা বেড়ায় ঠেসান দিয়ে একটা দড়ি দিয়ে পিঠের সঙ্গে ভালো করে বেঁধে নিয়েছে সে থলেটাকে। জামার পকেটে করে ভেবেচিন্তেই দড়িটা এনেছিল সে। পিঠে না বাঁধলে অত ভারি থলে নিয়ে পথ হাঁটা কি সম্ভব! হাতদুতো ব্যথায় টনটন করছে। কোনো মতে পা টেনে টেনেসে বেড়াটা টপকাতে যায়। শরীর দেয় না। পিঠে আবার অত ভারি বোঝা। উলটে গিয়ে পড়ে বরফের ওপর। মাংসের গন্ধে ছোঁক ছোঁক করে কুকুরগুলো। অনেক কষ্টে উঠে দাঁড়ায় সে। বেড়াটা টপকাতে পারলে পাহাড় আর বনের ভেতর দিয়ে বাড়ি পৌঁছনোর একটা সহজ পথ আছে। ওটা ধরতে পারলে শহরের মধ্যে আর বেশি ঘুরপাক খেতে হবে না। সে কি সত্যিই আজ বাড়ি পৌঁছতে পারবে! ভয়ে গা শিউরে ওঠে তার। তাহলে যে পশু পাখিগুলো না খেয়ে মরবে। বাড়িতে একটু খড় বিচালি আর কয়েক মুঠো ভুট্টা বই তো আর কিছু নেই। বাপ বেটা কিছু আনলেও আনতে পারে। তারা তো সকালেই ছ্যাকরা গাড়িটা নিয়ে বেরিয়েছে। গাড়িটা যেমন লড়ঝরে তেমনি তার ঘোড়াটাও…উপোসী হাড় জিরজিরে চেহারা। গাড়ির পেছনে আরো দুটো দুবলা পাতলা ঘোড়া বাঁধা। এই একটা গাড়িই এখনও টিকে আছে গ্রাইমসদের। ঘোড়াগুলো বিক্রি করে হয়তো ওরা দুটো পয়সা আনতে পারে ঘরে। তবে ফিরবে তো আকন্ঠ গিলে। না না ওদের আগেই বাড়ি ফিরে খাবার দাবার বানিয়ে রাখতে হবে।
ছেলের তো আবার মতি গতি ভালো নয়। পাশের গ্রামের এক মেয়ের সঙ্গে খুব আশনাই হয়েছে তার। সে গ্রাম আবার পনেরো মাইল দূরে। সে মেয়েও অত সোজা নয়। কেমন যেন রুক্ষ…কাঠ কাঠ চেহারা। কোনো লাবণ্য নেই শরীরে। গেল গ্রীষ্মে মেয়েটাকে একবার ঘরে এনে তুলেছিল ছেলে। বাপ তখন বাড়িতে ছিল না। ছেলে আর তার ওই পীরিতের মেয়েছেলেটা মদ গিলতে গিলতে তার সঙ্গে যা তা ব্যবহার করেছিল। এই লাও…অই আনো। মা কি তোদের চাকর বাকর নাকি! তবে মুখে কিছুই বলেনি সে। মুখ বুজে সব হুকুম তামিল করে গেছে। এখন সে বোবা হয়ে গেছে একদম। সেই কিশোরী বেলায় যবে সে জার্মান চাষির বাড়িতে বাঁদি হয়েছিল তারপর বিয়ের এই এতগুলো বছরে কোনোদিন সাত চড়েও রা কাড়েনি সে। নীরবে করে গেছে নিজের সব কাজ। জীবন যুদ্ধে টিকে থাকার এটাই মন্ত্র তার। তারপর ছেলে তো মেয়েটাকে রাতে নিজের বিছানায় তুলল…যেন কতকালের বিয়ে করা বউ। তাতেও কিছু মনে হয়নি তার। কোনো কষ্টও নয়। কষ্টের বোধটা তার তার অনেককাল আগেই মরে গেছে।
খোলা মাঠের মধ্যে পুরু বরফের চাদর ঠেলে পা টেনে টেনে এগিয়ে চলে বুড়ি। পেছনে কুকুরের দল। পাহাড়ের ঠিক ওপারে যেখানে ঘন জঙ্গল শুরু হয়েছে সেখানে একটা ফাঁকা জমি দেখা যায়। কেউ হয়তো ঘরবাড়ি করার জন্য গাছপালা কেটে পরিষ্কার করেছিল। কে জানে! এই এতখানি জমিতে বাগানওলা বিশাল একখানা বাড়ি হয়ে যেত…ঐ শহরের বাড়িগুলোর মতো। ওই ফাঁকা জমিটার পাশ দিয়ে চলে গেছে পায়ে চলার গুঁড়ি পথ। এত দূরে এসে বুড়ির পা আর চলে না। ক্লান্তিতে শরীর যেন ভেঙে আসে। একটা গাছের নীচে খানিক বিশ্রাম নিতে বসে সে। কিন্তু এখানেই যে চরম বোকামিটা হয়ে যায়। গাছের গুঁড়িতে পিঠের বোঝাটা নিয়ে বসে আরামে চোখ বুজে আসে। আর ওঠার মতো পায়ে জোর পায় না সে। চিন্তায় পড়ে যায় সে। এত পরিশ্রম আর ক্লান্তিতে চোখ বুজে আসে। খানিকক্ষণের জন্য ঘুমিয়েও পড়ে সে। প্রবল ঠাণ্ডায় হাত পায়ের সাড় চলে গেলে ঠান্ডার বোধও বুঝি আর থাকে না। দুপুরে একটু ঠান্ডাটা কম ছিল। তার আবার শুরু হয়েছে বরফ পড়া। এখন আবার আকাশটা একদম পরিষ্কার হয়ে গেছে। রুপোর থালার মতো চাঁদ উঠেছে। বরফ ঢাকা প্রান্তরে রুপো গলে গলে পড়ছে।
বাড়ির চারটে কুকুর বুড়ির পিছু পিছু শহরে গিয়েছিল। ইয়া লম্বা কঙ্কালসার চেহারা তাদের। জ্যাক গ্রাইমস আর ছেলের বাড়িতে এমন কুকুরই মানায় বটে। শত লাথি ঝাঁটা মারো…ঠিক এখানেই পড়ে থাকবে। কিন্তু তাদেরও তো খিদে আছে। তাই মাঝেই মাঝেই তাদের এখান ওখান থেকে খাবার দাবার চুরি করতে হয়। খোলা জায়গাটার পাসে গাছে ঠেসান দিয়ে বুড়ির চোখটা যখন একটু লেগে গিয়েছিল তখন তারা ছিল নিজেদের তালে। জঙ্গলে…পাশের জমিতে দু একটা খরগোশ শিকারের জন্য ছটাছুটি করছিল তারা। কোত্থেকে আরও তিনটে কুকুর এসে জুটেছে তাদের সঙ্গে। কিছুক্ষণ পর আবার খোলা জায়গাটায় ফিরে এল তারা। তাদের মধ্যে কীসের যেন ছটফটানি। এমন এমন ঠান্ডা কনকনে চাঁদ ধোয়া রাতে কুকুররা বোধহয় মাথার ঠিক রাখতে রাখতে পারে না। এমন রাতে তারা বুঝি মত্ত হয়ে ওঠে। এটা আজকের কথা নয়। সেই অনেক কাল আগে যখন তারা নেকড়ে ছিল তখন থেকেই তারা নিজেদের রক্তে বয়ে আনছে এই আদিম প্রবৃত্তি। এমন শীতের রাতে জঙ্গল দাপিয়ে বেড়ানোর সেই পুরোনো অভ্যেস আজ যেন আবার ভর করল তাদের।
বুড়ির সামনেই দু তিনটে খরগোশ ধরে এখনকার মতো খিদে মিটিয়ে নিয়েছে তারা। পেটের জ্বালা আর নেই। মন এখন তাদের চনমনে। খোলা জায়গাটায় গোল করে ঘুরে ঘুরে তারা অদ্ভূত এক খেলা শুরু করে দেয়। গোল হয়ে ঘুরেই যায় তারা। সামনের কুকুরটার লেজের কাছের পরের কুকুরটার নাক…তাদের পথ একেবারে গোল। খোলা জায়গাটায় বরফে ঢাকা গাছের নীচে রুপোগলা রাতে তাদের এই অদ্ভূত খেলা মনে ধাঁদা লাগিয়ে দেয়। নীরবে গোল গোল হয়ে ঘুরেই যায় তারা। তাদের পায়ের ছাপ পড়ে বরফে। কোথাও কোনো শব্দ নেই। সব নিঝুম।
দেহ থেকে প্রাণটা বেরিয়ে যাওয়ার আগে বুড়ি হয়তো এই দৃশ্য দেখেছিল। ঘুমোতে ঘুমোতে দু একবার হয়তো চোখ খুলেছিল তার। তখনই হয়তো ঘুম জড়ানো ঘোলা চোখে সে দেখে এই দৃশ্য। এখন আর অত ঠান্ডা লাগছে না তার। চোখ দুটো খালি বুজে আসছে। এই এতগুলো বছর জীবনটাকে বয়ে বয়ে সে ক্লান্ত। কী জানি… তার মাথাটাও বুঝি কাজ করছিল না সেসময়। স্বপ্নে হয়তো ফিরে এসেছিল তার ছেলেবেলা…ঐ জার্মান চাষির বাড়িতে তার বাঁদীগিরির দিনগুলো…হয়তো বা সেই কতকাল আগের শৈশবের কথা…মা-টা কেমন ছেড়ে চলে গেল তাকে! এই হাবিজাবি স্বপ্নই হয়তো সে দেখেছিল… ভালো কিছু নয়। তার জীবনে ভালো কিছু ঘটেছেই বা কবে! মাঝে সাঝে তার দু-একটা কুকুর দল ছেড়ে তার সামনে এসে দাঁড়িয়েছিল। কুকুরটা তার গন্ধ শুঁকে দেখেছিল আর লকলক করে উঠেছিল সেটার জিভ।
গোল হয়ে কুকুরগুলো ঘুরেই চলেছিল… যেন কোনো মৃত্যুর উৎসবে মেতেছে তারা। তারা যেন নিজের মধ্যে নেই। নিজেদের ভেতরে লুকিয়ে থাকা নেকড়ের আদিম সত্ত্বা আজ এই মায়াবি রাতে তাদের তাড়িয়ে নিয়ে বেড়াছে। গোল হয়ে ঘুরতে ঘুরতে মাঝে একটু আশংকাও জাগে মনে। যেন কিছু বলতে চায় ওরা… ‘ আমরা কিন্তু এখন আর নেকড়ে নই। আমরা এখন কুকুর হয়ে গেছি। মানুষের ভৃত্য। মানুষ তুমি বেঁচে থাকো…তুমি মরে গেলে যে আমরা আবার নেকড়ে হয়ে যাব’।
এরই মধ্যে একটা কুকুর বুড়ির কাছে এসে তার মুখে নাক ঠেকিয়ে দেখে। তারপর খুশিমনে আবার চলে যায় নিজেদের দলে। আবার শুরু করে তাদের সেই বীভৎস নাচ। বুড়ি মরার আগে অবধি কুকুরগুলো এভাবেই নাচানাচি করেছিল। এসব কথা আমি পরে জেনেছি। বড় হওয়ার পরে এমনই এক শীতের রাতে ইলিয়নিসের এক জঙ্গলে আমিও কুকুরদের এই উন্মত্ত নাচ আমি দেখেছি। আমার মরার জন্য ওরা অপেক্ষা করছিল। আমার ছোটবেলায় এক বুড়ির মৃত্যুর জন্য ওরা ঠিক একই ভাবে ওঁত পেতে দাঁড়িয়েছিল। আমি যখন এই ঘটনার মধ্যে পড়ি তখন আমি রীতিমতো জোয়ান। শরীরে টগবগে রক্ত। মরার কোনো ইচ্ছেই ছিল না আমার।
সারা জীবনের মতো বুড়ির মৃত্যুটাও ছিল আশ্চর্য নীরব। ধীরে ধীরে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছিল বুড়ি। আবার একটা কুকুর এসে বুড়িকে শুঁকে দেখে। বুড়ি মরে কাঠ। নাচ থামিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে গ্রাইমসদের কুকুরগুলো। তারা বুড়িকে ঘিরে দাঁড়ায়। বুড়ির দেহে যতদিন প্রাণ ছিল সব কুকুরকে সে খাইয়েছে। কিন্তু এবার কী হবে? বুড়ির পিঠে ভারি থলেটা বাঁধা। তার মধ্যে লোভনীয় সব জিনিস…নুন মাখানো পর্ক, মেটে, মাংস আর টেংরি। আজ জীবনের শেষ দিনে কসাইখানার লোকটা বুড়ির থলে একেবারে ভরে দিয়েছিল। বোধহয় একটু দয়া হয়েছিল তার। বুড়ি বেশ ভালো একটা দাঁও মেরেছিল আজ।
আবার এখন দাঁও মারার পালা… এবার কুকুরদের।

একটা কুকুর লাফিয়ে চলে যায় বুড়ির কাছে। আঁতি পাঁতি করে খোঁজে বুড়ির পিঠের থলে। আবার যে যেন তারা নেকড়ে হয়ে যায়। নেকড়দের দলে একজন নেতা থাকে সবসময়। তার সঙ্গে পোঁ ধরে বাকিরা। নেতাকে দেখে বাকিরাও বুড়ির পিঠে বাঁধা থলেতে আমূল দাঁত বসিয়ে দেয়। তারপর বুড়ির প্রাণহীন শরীরটাকে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যায় খোলা জায়গাটায়। বুড়ির ময়লা তালি মা্রা জামাটা কাঁধের কাছ থেকে ছিঁড়ে একেবারে ফর্দাফাঁই হয়ে যায়। দু একদিন পরে বুড়ির দেহ যখন পাওয়া গেল তখন তার জামাটা ছিঁড়ে একসা। কোমরের কাছে শুধু একখণ্ড কাপড়। কুকুরগুলো তার শরীরে অবশ্য কোনো থাবা বসায়নি। থলেটা ছিঁড়ে খুড়ে তারা শুধু মাংসটা বের করে নিয়েছিল। বরফে কুঁকড়ে জমে এতটুকু হয়ে গিয়েছিল দেহটা। তার সরু রোগাটে কাঁধটা দেখে মনে হয়েছিল সদ্য কিশোরী। আমি যখন ছোট ছিলাম তখন মধ্য পশ্চিমে খামার লাগোয়া শহরগুলোতে এমন ঘটনা মাঝেই মাঝেই ঘটত। বুড়ির দেহটা খুঁজে পায় এক শিকারি। বনে খরগোশ শিকারে বেরিয়ে বরফে ঢাকা খোলা জায়গাটায় দেহটা দেখতে পায় সে। তবে লাশটা সে স্পর্শও করেনি। কেমন যেন বেকুব বনে গিয়েছিল সে। বুড়ির থলেটা খাবলে খুবলে কুকুরগুলো তার দেহটা যেখানে এনে ফেলেছিল সে জায়টায় কেমন যেন এক অতিপ্রাকৃত নৈঃশব্দ। গা ছমছম করে ওঠে শিকারির। কোনো মতে ছুটে চলে আসে শহরে।
আমি তখন এক দাদার সঙ্গে বড় রাস্তাতেই দাঁড়িয়ে ছিলাম। দাদা এই শহরে খবরের কাগজ ফিরি করে। দাদা তখন বিকেলের কাগজ ফিরি করছিল দোকানে দোকানে। অন্ধকার ঘনিয়ে এসেছে। এমন সময় সেই শিকারি ছুটতে ছুটতে মুদিখানায় এসে একনিঃশ্বাসে বলে যায় তার কাহিনী। তারপর সে যায় যন্ত্রপাতির দোকানে…সেখান থেকে ওষুধ দোকানে। কথটা চাউর হতেই রাস্তাঘাটে লোক জমে যায়। তারা সবাই মিলে ছোটে জঙ্গলের দিকে। দাদাও ছুটল তাদের সঙ্গে। কাগজ ফিরি করা মাথায় উঠল তার। যে পারে সে এসে জুটল এই দলে। আন্ডারটেকার* আর টাউন মার্শালও চলে এলেন। কেউ কেউ আবার ঘোড়ার গাড়িও জুটিয়ে ফেলল। কিন্তু বড় রাস্তাটা যেখানে বনের দিকে বেঁকে গেছে সেখানটা বড় পিছল। বার বার ঘোড়ার পা পিছলে যায়। শেষমেশ দেখা গেল যারা হাঁটাপথ ধরেছিল তারাই পৌছেছে আগে।
আমাদের টাউন মার্শালের বেশ লম্বা চওড়া মানুষ। গৃহযুদ্ধের সময় পায়ে তাঁর একটা আঘাত লেগেছে। একটা বেতের লাঠি নিয়ে খোঁড়াতে খোঁড়াতেই চললেন তিনি। আমি আর দাদা চললাম তাঁর পিছু পিছু। তারপর এত লোকজনের জটলায় মিশে গেলাম। শহর থেকে যে পথ ধরে বুড়ি বনে ঢুকেছিল সেই পথে এলাম আমরা। আজও আকাশে ভরা চাঁদ। রুপোলি আলোয় ভেসে যায় চারিদিক। মার্শালের মনে সন্দেহ। খুন টুন নয়তো? শিকারিকে তিনি তো রীতিমতো জেরা শুরু করে দিলেন। শিকারি কাঁধের ওপর বন্দুকটা চড়িয়ে বেশ হামবড়া ভাব দেখিয়ে যায়। তার পিছনে পিছনে একটা কুকুর। আজ সে একজন কেউকাটা। খরগোশ শিকার করে বেড়ানো একটা সামান্য জীবনে এত গুরুত্ব কি সে আগে পেয়েছে? আজ সবার দৃষ্টি তার দিকে। সে তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করে ব্যাপারখানা। টাউন মার্শালের পাশে পাশে সে সবাইকে রাস্তা দেখিয়ে চলে… ‘ আমি তো দেখে কোনো আঘাতের চিহ্ন টিহ্ন দেখিনি। কেমন ফুটফুটে একটা মেয়ে! মুখটা অবশ্য দেখিনি। মুখটা পুরো বরফে গোঁজা। না না আমি ওকে আগে কখনো দেখিনি’। শিকারি আসলে দেহটাকেও ভালো করে দেখেনি। সে ঘাবড়ে গিয়েছিল। কে জানে বাবা কে খুন খুন করে লাশটা এখানে ফেলে রেখে গেছে। সে লাশটা দেখতে গেলে খুনি যদি পিছন থেকে তার ওপরেও ঝাঁপিয়ে পড়ে! শীতের সময় এই ভর সন্ধেবেলা জঙ্গলের ভেতর এমনিতেই গা ছম ছম করে। চারদিকে ন্যাড়া ন্যাড়া সব গাছে…বরফে ঢাকা জমি…মনটা এমনিতেই যেন কু গায়। আশে পাশে যদি কোনো অস্বাভাবিক ঘটনা ঘটে তাহলে এমনিতেই সেখান থেকে ছুটে পালাতে পারলে বাঁচা যায়।
মাঠ ঘাট পেরিয়ে বুড়ি যেপথ দিয়ে গিলেছিল সেই পথেই মার্শাল আর শিকারি পিছু পিছু দল বেঁধে চলল সব। জঙ্গলের পথে অনেক চড়াই রয়েছে।
আমি আর আমার দাদা একেবারে চুপ মেরে গিয়েছিলাম। কোনো কথা যোগাচ্ছিল না আমাদের মুখে। দাদার কাধে কাগজের থলে। আবার শহরে ফিরেই তাকে ওগুলো ফিরি করতে বেরোতে হবে। তারপর সে বাড়ি যেতে পারবে। আমরা যদি এদের পিছু নিই তাহলে বাড়ি ফিরতে অনেক রাত হয়ে যাবে। মা বা দিদিকে আমাদের খাবার গরম করার জন্য বসে থাকতে হবে। কিন্তু জঙ্গলে তো যাবই। শেষ না দেখে ছাড়ব না। শিকারি যখন আসে তখন ভাগ্যিস আমি মুদির দোকান ছিলাম! তাই তো খবরটা পেলাম। শিকারি এই আশে পাশের গাঁয়েই থাকে হয়তো। আগে তো কখনো ওকে দেখিনি।
আমাদের দলটা এখন জঙ্গলে ওই খোলা যায়গাটার কাছে চলে এসেছে। এই শীতের দিনে এই বন জঙ্গলে কেমন ঝুপ করে অন্ধকার নেমে যায়। চাঁদের আলোয় আজ সবকিছু দেখা যাচ্ছে স্পষ্ট। যে গাছটার নীচে বুড়ি মরে পড়েছিল তার কাছেই নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে রইলাম আমরা দুই ভাই। দেহটা একদম জমে গেছে বরফে। আকাশ চুঁইয়ে পড়া নরম আলোয় মানুষটাকে মোটেই বয়স্ক মনে হচ্ছিল না। আমাদেরই মধ্যে কেউ একজন গিয়ে উপুড় হয়ে থাকা দেহটাকে সোজা করে দিল গিয়ে। সব দেখে ফেললাম আমি। সব। থরথরিয়ে কেঁপে উঠল আমার সারা গা। সে বিচিত্র এক অনুভূতি। বলে বোঝানো যায় না। আমার দাদাও কেঁপে উঠেছিল। কী জানি হয়তো ঠান্ডার জন্য।
নারী শরীর আর আগে আমরা কোনোদিন দেখিনি। বরফে মোড়া দুধ-সাদা ওই দেহটাকে কী অপূর্ব লাগছিল! যেন শ্বেতপাথর কুঁদে বানানো কোনো দেবী মূর্তি। আমাদের দলে কোনো মেয়েছিল না। একটা লোক এগিয়ে গিয়ে নিজের কোটটা খুলে দেহটাকে ঢেকে দিল। লোকটাকে আমি চিনি। ওই তো আমাদের ওখানকার কামার। ওই লোকটাই দেহটাকে পাঁজাকোলা করে তুলে নিয়ে আবার শহরের দিকে হাঁটতে শুরু করল। আমরা সবাই ফেরার পথ ধরলাম। তখনও আমরা জানতাম না লাশটা কার। কী তার পরিচয়!

ওখানে সব দেখেছি আমি। বরফের ওপর একটা গোল মতো পায়ে চলা পথ আমার নজরে এসেছিল…ওই ওখানেই কুকুরগুলো বরফের ওপর দিয়ে দৌড়োদৌড়ি করেছিল। আমি দেখেছি বরফে জমা ধবধবে সাদা দেহটাকে দেখে সবাই কেমন বাক্যহারা বিবশ হয়ে পড়েছিল। আমি শুধু তাদের ফিসফিসানি শুনেছি। কেমন যেন ঘোর লেগে গিয়েছিল তাদের। জোরে কথা বলার শক্তিটুকুও তারা হারিয়েছিল। আন্ডারটেকারের* ঘরে দেহটাকে নিয়ে যাওয়া হল। কামার, ওই শিকারি, মার্শাল আর আরো কয়েকজন ভেতরে ঢুকে দরজাটা বন্ধ করে দিল। চার্চের ফাদার থাকলে তিনিও ঢুকতেন। কিন্তু আমাদের ছোটদের ভেতরে ঢোকার অনুমতি মেলেনি।
আমিও দাদার সঙ্গে বাকি কাগজগুলো ফিরি করতে ছুটলাম। বাড়ি ফিরে দাদার মুখ থেকেই পুরো গল্পটা শুনি। আর কোনো কথা বলতে পারিনি সেদিন। চুপচাপ ঘরে গিয়ে শুয়ে পড়লাম। দাদা যেভাবে গল্পটা বলেছিল সেটা শুনে ঠিক আমার মন ভরেনি। আমার যে আরো অনেক কিছু জানার বাকি ছিল। পরে শহরের এদিক ওদিক আরো টুকরো টাকরা কথা শুনে আমি একটু একটু করে গল্পটাকে জোড়া দিয়েছি।
কোত্থেকে জানিনা মহিলার স্বামী আর ছেলেকে পুলিশ শহরে ধরে আনে। মহিলার মৃত্যুতে ওদের কোনো হাত ছিল কিনা জানার অন্য অনেক জেরাও হয়। কিন্তু ওরাও কম ঘোড়েল নয়। তারা যে ওইসময় ধারে কাছেও ছিল না তার হাতে গরম প্রমাণ ছিল তাদের কাছে। তবে গোটা শহরের লোকজন ওদের ওপর এত খাপ্পা হয়েছিল যে আস্তানা থেকে ওদের পাতটাড়ি গুটিয়ে পালাতে হয়।
আমার চোখের সামনে বার বার ভেসে আসে ছবিটা। নিরাবরণ এক নারী শরীর…দুধের মতো সাদা…কিশোরীর মতো গড়ন…পুরু বরফের মধ্যে মুখখানা গোঁজা…বরফের ওপর কুকুরগূলোর পায়ে চলা পথের চিহ্ন…শীতের জ্যোস্নাভেজা রাত…আকাশ জুড়ে ভেসে বেড়ানো থোকা থোকা সাদা মেঘ…আমার তখন বিহ্বল দশা। এ দৃশ্য কোনোদিন ভুলতে পারব না আমি।
ওইদিন জঙ্গলে যা দেখেছিলাম একেবারে মনের মধ্যে গেঁথে গিয়েছিল। সে কথা বার বার মনে করেই তো আজ এই সত্যি ঘটনাটা বলতে পারছি। এর তার কথার মধ্যে দিয়ে পুরো গল্পটা জোড়া দিতে পেরেছি অনেক পরে।
সময় গড়িয়ে যায়। ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটে। বড় হয়ে আমিও এক জার্মান চাষির খামারে কাজে ঢুকেছিলাম। ওখানেও একজন কেনা বাঁদি ছিল। মালিকের ভয়ে সে তটস্থ হয়ে থাকত। মালিকের বউ দিনরাত দুচ্ছাই করতে তাকে। ওখানে কী কী ঘটত সব আমি নিজের চোখে দেখেছি।
তারপর বরফে মোড়া এক শীতের দিনে ইলিয়নিসের ঘন জঙ্গলে কুকুরদের এই বীভৎস উল্লাসও আমি দেখেছি। সেদিনও চাঁদের আলোর বান ডেকেছিল পৃথবীর বুকে।
আমি তখন স্কুলে পড়ি। গ্রীষ্মের একদিন এক বন্ধুর সঙ্গে হাঁটতে হাঁটতে খাঁড়ির কাছে গ্রাইমসদের ওই বাড়িটা দেখে আমি। সে এখন ভূতের বাড়ি। কেউ থাকে না । দরজাগুলো সব ভেঙে পড়েছে। জানালার কাচও ভাঙা। বাড়ির পেছন থেকে দুটো কুকুর ছূটে এসেছিল আমাদের দিকে। মনে হয় এই খামারেরই কুকুর। লম্বা…হাড় পাঁজরা বের হওয়া কুকুর দুটো বেড়ার কাছে এসে আমাদের দিকে জ্বলজ্বলে চোখে তাকিয়েছিল।
ওই মহিলার মৃত্যর পুরো ঘটনাটা দূর থেকে ভেসে আসা কোনো সঙ্গীতের মতো মনে হয় আমার। সুরগুলোকে শুধু আলাদাভাবে চিনে নিতে হয়। মরমে মরমে উপলব্ধি করতে হয়।
বুড়ি শুধু পশুদের খিদেই মিটিয়ে গেল। জীবন ভর। সারাজীবন ধরে শুধু এই কাজই করেছে সে। হয়তো বা জন্মের আগে থেকেই। তারপর শৈশবে, কৈশোরে জার্মান চাষির খামারে…তারওপর বিয়ের পর স্বামীর ঘরে …এমনকি মৃত্যুতেও শুধু সে পশুদেরই খিদে মিটিয়েছে। মুরগি, শুয়োর, ঘোড়া, আর মানুষের মধ্যে লুকিয়ে জন্তুটার খিদের জ্বালা সেইশান্ত করেছে। মেয়েটা তার জন্মেই মরেছে। ছেলের কাছে থেকেও শুধু লাথি ঝাঁটাই খেয়েছে। মৃত্যুর দিনেও জীবনের সর্বশক্তি দিয়ে কাঁধে ভারি থলে বইতে বইতে পশুদেহের খিদে মেটানোরই আয়োজন করেছিল সে। আর কিছু ছিল না তার জীবনে। পশুর মতো একটা জীবনই বয়ে বেড়াল সে।
জঙ্গলের ভেতরে একটা খোলা জায়গায় মৃত্যর কোলে ঢলে পড়ার পরও সে পশুদের মুখে খাবার তুলে দিয়েছে।
এই কথাটাই বার বার মনে বেজেছিল আমার। সেদিন রাতে বাড়ি ফিরে আমার দাদা যখন গল্পটা বলেছিল আমার মা আর দিদি চুপ করে শুধু শুনেছিল। আমরা মনে হয়েছিল দাদা গল্পের আসল রহস্যটাই বোঝেনি। ও তো খালি ঘটনাই বলেছিল। অবশ্য কোনোকিছু তলিয়ে দেখার মতো বয়স ওর হয়নি। তখন আমিও খুব ছোট। কোনো কোনো ঘটনার মধ্যে এমন এক পূর্ণতা থাকে…এমন এক রহস্য থাকে যে তাকে অপার্থিব বলে মনে হয়।
যে রহস্য আমি পরে অন্তর দিয়ে উপলব্ধি করেছি তা আর ভাঙতে চাইনা। দাদার কাছ থেকে ঘটনটা শোনার পরেও কেন আমার মন ভরেনি সেটা আমি পরে বুঝতে পেরেছি। এই সাদামাটা একটা গল্প কেন আমি বার বার শোনাতে যাই আপনারা হয়তো বুঝতে পারবেন।

• মৃতদেহর সমাধি হওয়ার আগে যিনি তার পরিচর্যা আর সংরক্ষণ করেন।
‘একটি নীরব মৃত্যু’ গল্পটি শেরুউড অ্যান্ডারসনের ‘ ডেথ ইন উডস’ গল্পটির অনুবাদ।

Loading

Leave A Comment